কোমলমতি কর্পোরেট


 আজকেই এই কম্পানিতে প্রথম পদার্পণ করলাম। ঘণ্টা দুয়েক হল বসে আছি আমার নব্য বসের সামনে। এই দুই ঘন্টার মধ্য উনি একবার তার মোটা চশমার ফ্রেমের উপর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। ভাবলাম কিছু জিজ্ঞেস করে কিনা তাই একটু নড়ে চড়ে বসলাম দেখি নাহ উনি একবার আমার দিকে তাকিয়েই আবার তার কাজে মনোযোগ দিলেন। উনার কক্ষের চারপাশ দেখতে শুরু করলাম এবার , খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখা কক্ষের সমস্ত আসবাবপত্র। কক্ষের ঈশান কোণে রবিন্দ্রনাথের ছবি ঝুলানো। ছবির রবিন্দ্রনাথ হাসিমুখে রয়েছেন, সাধারনত আমার দেখামতে সকল ছবিতে উনি গোমড়া মুখে থাকেন। এসব ভাবতে ভাবতে বসের দিকে তাকাতেই দেখি বস আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি বলে উঠলেন কেমন আছেন? জবাব দিলাম ভালো। টেবিলে রাখা গ্লাসের পানিতে চুমুক দিয়ে বললেন, এই ছবিটা আমার দাদা শান্তিনিকেতন থেকে এনেছেন।অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলে বসলেন কর্পোরেট জগতে প্রবেশ করলে আপনার ও চারটা চোখ হয়ে যাবে। তারপর জিজ্ঞেস করলেন বাসা কোথায়? বাবা কি করেন? কয় ভাইবোন? ইত্যাদি!!! তারপর সিভির দিকে নজর দিলেন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ব্রিলিয়ান্ট আছো তাইলে ! এইটারে কাজে লাগাও উপরে যাইতে পারবা শিগ্রই। শহিদুল নামে একজন কে ডাক দিলে। ডাকের প্রায় সংগে  সংগেই ভেতরে প্রবেশ করল শহিদুল নামের লোকটা। মনে হল ডাকের অপেক্ষাতেই ছিল। শহিদুল দেখতে পাঠানদের মত প্রায় সাড়ে ছয় ফিট লম্বা আর ভারী শরীর তার। পালোয়ানদের মত ভারিক্কী চালে চলাফেরা তার। বস শহিদুল কে আমার ডেস্ক বুঝিয়ে দিতে বললেন। শহিদুল আগে চলছে আর আমি তার পেছনে পেছনে যাচ্ছি। অবশেষে ভবনের তের তলার উত্তর দিকের কেবিনে আমার স্থান হল। আমাদের কাবিনে প্রায় পনেরটি ডেস্ক আছে। আমার ডেস্কে গিয়ে বসার পর খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। এলোমেলো আর ধুলোবালি জমে একাকার ডেস্কটি। পূর্বে যিনি এখানে ছিলেন তিনি বোধহয় খুব সৃজনশীল মনের ছিলেন। কোন এক অজানা কারণে উনি গ্রামে গিয়ে আর ফিরে আসেন নি। কিছুক্ষন পর মুন্না নামের একজন আসল চা নিয়ে। চায়ে চুমুক দিয়ে বুজলাম চা খুব যত্ন করে বানানো হয়েছে, আদা আর কালোজিরা দেয়া হয়েছে এতে। চা খেতে খেতে জনাব মুন্নার সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম। এই অফিস সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নিলাম। সহকর্মী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই উনি ঢোক গিলে বললেন সব ঠিক আছে কিন্তু একটা বিষে ভরা নাগিন আছে। চলবে............।।

Post a Comment

0 Comments